সুপ্রভাত বাংলাদেশ, সোমবার, নভেম্বর ১৪, ২০২২; সময় : ১১:৫৯ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক »

স্কুল কলেজ পালিয়ে সিনেমা দেখতে যাওয়ার গল্প আমাদের অভিভাবকদের কাছে হর-হামেশাই শুনতে পাই। সোনালী দিনের রূপালী স্মৃতি রোমন্থনে তাদের মুখে মধুর হাসি ফুটে ওঠে। এ থেকে বোঝা যায়, সেই প্রজন্ম তাদের সময়ে কতোটা সিনেমা পাগল ছিলেন।

৯০ দশকের পর থেকে এসব গল্প পাল্টে যেতে থাকে। সিনেমা পাগল মানুষেরা হতে থাকে সিনেমা বিমুখ।জানা গেছে, এক সময় সংস্কৃতিচর্চার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিলো চট্টগ্রাম, যেখানে সিনেমা হল ছিলো প্রায় ১৩/১৪টির মতো, এখন তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩টিতে। সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্স, সুগন্ধা ও সিনেমা প্যালেস।

সম্প্রতি এমন দুর্দশার দিনেও হাতেগোনা সিনেমা হলগুলোতে দেখা যাচ্ছে পুরোনো আমেজ। দর্শক সংখ্যা বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। পরাণ ও হাওয়া চলচ্চিত্র দুটি মুক্তির পর টানা বেশ কয়েক সপ্তাহ হাউসফুল হয়েছে। আলোচনার বিষয় হয়েছে বাংলা সিনেমা।

নগরের সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে আসা নেজাম উদ্দিন নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র জানান, ‘আগের চেয়ে ভালো মানের কাজ হচ্ছে, কেবল প্রেম নির্ভর গল্পের বাইরে অনেকে গল্প লিখছেন। তাছাড়া সিনেমা হলগুলোর পরিবেশ একটা বিরাট ভূমিকা পালন করে। এমন নিরাপদ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও উন্নত পরিবেশ (সিলভার স্ক্রিন সিনেপ্লেক্স) থাকলে মানুষ হলমুখী হবেই।’

নগরীর পূর্ব নাসিরাবাদ এলাকায় ফিনলে স্কয়ারে সিলভার স্ক্রিন নামে আধুনিক নির্মিত হয়েছে চট্টগ্রামের প্রথম সিনেপ্লেক্স। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এ হলে বিমানের মানের প্রোজেকশন ও সাউন্ড সিস্টেম, বড় পর্দা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পরিপাটি আসন বিন্যাসসহ দর্শক সেবার সব রকম সুবিধার আয়োজন রয়েছে।

দর্শক উপস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে সিনেপ্লেক্সটির অপারেশন ম্যানেজার সালাউদ্দিন পারভেজ জানান, ‘আমরা সন্তুষ্ট। গতানুগতিক ধারার বাইরে সিনেমা নির্মিত হচ্ছে। সিনেমার কাহিনীতে বৈচিত্র্য দেখা যাচ্ছে। সব শ্রেণির মানুষের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া হলের পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হলের ঘাটতি এবং আশানুরূপ পরিবেশ না থাকায় কিছু বছর আগেও সবশ্রেণির মানুষ সিনেমা হলে আসতোনা।’

মনিরা পারভীন নামে একজন গৃহিণী জানান, ‘হলে এসে সিনেমা দেখতে তো প্রায় ইচ্ছে করে। হলের পরিবেশ এবং পরিবার নিয়ে দেখতে পারার মতো সিনেমা নির্মাণ একটা সময় বন্ধই হয়ে গেছিলো। কিন্তু এখন এমন সিনেমা  তৈরি হচ্ছে। পরপর কয়েকটি সিনেমা পরিবার নিয়ে দেখতে পেরেছি।’

এ প্রসঙ্গে সুপ্রভাত প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ‘হাওয়া’ সিনেমার পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সিনেমা হলের ঘাটতি চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নকে অনেকটুকু ক্ষতিগ্রস্থ করছে। মানুষের সুস্থ বিনোদনের প্রয়োজন। হলের পরিবেশ ভালো থাকটা জরুরি। অন্যথায় ভালো কাজ হলেও হলের ঘাটতি থাকলে চলচ্চিত্র শিল্প আশানুরূপ সাফল্য পাবেনা। কেননা পরিবেশ ও ভালো সিনেমা পেলেই দর্শক হলে আসবেন। যেমন অনেক হল আমাদের সিনেমা নিতে চেয়েছে। পরিবেশে, সাউন্ড সিস্টেম, স্ক্রিন ইত্যাদির কারণে অনেকের কাছে আমাদের সিনেমা দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

কিছুদিন আগেও সিনেমা হলগুলোতে কেবল ঈদ-পূজার মতো উৎসব মৌসুমে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো একটা নির্দিষ্ট সময় অব্দি চলতো। এখন কয়েকমাস পেরিয়ে গেলেও মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলোর ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে দর্শকদের সমান আগ্রহ।

অনেকের মতে, আগে ভালো কাজগুলোর নির্মাতাগণ প্রচার বিমুখ ছিলেন। তবে এখন তারা বুঝতে পেরেছেন ভালো কাজ তৈরির সাথে সাথে তার প্রচারও গুরুত্বপূর্র্ণ। তাই সোশ্যাল মিডিয়ারও গণ্ডি পেড়িয়ে বিভাগীয় শহরগুলোতে চলচ্চিত্রগুলোর চিত্তাকর্ষক প্রচারে মনোযোগী হচ্ছেন নির্মাতারা। এছাড়াও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, যোগ্য পরিচালক, দক্ষ অভিনয়, আর্থিক সহযোগিতা এসব বিষয়ও আমাদের দেশে ভালো সিনেমা নির্মাণের অন্তরায় বলে দর্শকরা মনে করছেন।

বর্তমানে চলচ্চিত্রকে ঘিরে এক প্রকার প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশও তৈরি হয়েছে চলচ্চিত্রাঙ্গনে। ভালো চলচ্চিত্রের সাথে সাথে দর্শকদের আশা এ প্রতিযোগিতা যেন অসুস্থ প্রতিযোগিতায় পরিণত না হয়। সিনেপ্লেক্সের সংখ্যা যেন বাড়ানো হয়। টিকেটের দাম সকল শ্রেণির মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখার দাবিও তারা জানান।

এ সম্পর্কে হল মালিকদের দাবি, করোনা মহামারির ক্ষতি পরবর্তী  রক্ষণাবেক্ষণ, কর্মচারীদের বেতন, কর, ফ্লোর ভাড়া ইত্যাদি খরচ মিটিয়ে টিকিটের দাম বর্তমান মূল্যের কমে রাখা সম্ভব হয় না। যদি সরকারি সহযোগিতা পাওয়া যেত তাহলে এসব সমস্যার সমাধান হতো। এতো সব সীমাবদ্ধতার পরও সিনেমা হলে দর্শকদের প্রত্যাবর্তন চলচ্চিত্র শিল্পের সুদিন ফিরে আসারই পূর্বাভাস বলে দর্শকরা মনে করছেন।

Related Article

Write a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *